মতামত

পনেরশ’ টাকা পারবে কি মায়ের চোখের পানি মুছতে!

হতভাগা নারী পারভীন আক্তার মাত্র পনেরশ’ টাকা ঘুষ দিতে না পারায় আজিমপুর মাতৃসদন হাসপাতালের থেকে করে দেয়া হয় তাকে। বের করে দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে মাতৃসনদ হাসপাতালের বারান্দাতেই মানবিক কিছু মানুষের সহায়তায় সন্তান প্রসব করেন সেই নারী।

কিন্ত দুর্ভাগ্য হতভাগা মায়ের। জম্মের কয়েক মিনিটের মধ্যে সুন্দর পৃথীবির নিষ্ঠুর ও অমানবিক মানুষের কাছ থেকে না ফেরার দেশে চলে ছোট্ট শিশুটি। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে দৃশ্য দেখে হাসপাতাল ও আশপাশের মানুষ।

তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের সাফাই গাইতে ব্যস্ত। নিলেন না কোনো দায়িত্ব। বললেন, পারভীন আক্তার পাগল, মানসিক রোগী। তাই তাকে ধরে রাখা যায়নি। খুব সুন্দর করে মিডিয়ার সামনে এমন বক্তব্য দেন ডা. ইশরাত জাহান। ঘটনার একদিন পার না হতেই নিজেদের দায় স্বীকার করেন তিনি। অকপটে স্বীকার করেন নিজেদের ভুলের।

এতে প্রশ্ন জাগে- সেবাখাত কি মানবিক হয়, নাকি অনমাবিক হয়। তবে সরকারি হাসপাতালে যে ঘুষ ছাড়া চিকিৎসা পায় না সাধারণ মানুষ তা ছোট্ট শিশুটির মৃত্যু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। অথচ একটু ভালবাসা আর মানবিকতায় বেঁচে যেতে পারতো শিশুটি। হাঁসি-খুশিতে ভরে যেত হতভাগা মায়ের কোল।

সন্তানকে পেটে রেখে পৃথিবীতে নিরাপদে নিজের কোলে রাখতে পারেননি পারভীন আক্তার। পারবেন কি ভুলতে সন্তানের কোমল চেহারা। ছোট ছোট হাত দুটোর স্পর্শ?

ডিজিটাল বাংলাদেশ মুখে বলা হলেও বাস্তবে কি নিশ্চিত করতে পেরেছে স্বাস্থ্যসেবা? যদি বাস্তবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হত তাহলে সাধারণ মানুষ সঠিকভাবে পেত চিকিৎসাসেবা। মাত্র পনেরশ’ টাকার জন্য খালি হত মায়ের কোল?

অথচ রোহিঙ্গাতের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বজুড়ে মানবিকতার রোল মডেল হিসেবে প্রশংসিত, ঠিক তখনই অমানবিকতা অবহেলায় শিশুর মৃত্যু।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মাতৃসনদ হাসাপাল ঘুরে খোলা জায়গায় কিছু মানবিক মানুষের সহায়তায় কাপড়ের তৈরি প্রাচীরের ভেতর সন্তান প্রসব করেন পারভীন আক্তার।

কিন্তু রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার একটি স্বাস্থ্যসেবা। অন্তঃসত্ত্বা মা সে চিকিৎসাসেবা পেতে পুরোপুরি ব্যর্থ। ঘটনাটিকে দুঃখজনক এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সভ্যতার উপর কালিমা লেপন বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

মানবসেবার বদলে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেগুলোর এমন অমানবিক কাণ্ড করার অধিকার আছে কি? মানবিক বাংলাদেশ পারবে কি মায়ের কোল ভরাতে? পারবে কি মায়ের চোখের পানি মুছতে?

তবে গরীরের জন্য যে চিকিৎসা নেই তাও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আজিমপুরের মাতৃসনদ হাসপাতালের অমানবিকতা। যে অমানবিকতা কাঁদিয়েছে হাজারো মাকে। নাড়া দিয়েছে বিবেকবান মানুষদের। নাড়াতে পারেনি হাসপাতালের কিছু লোভী, ঘুষখোর মানুষ রুপি শয়তানদের।

কিন্তু মা পারভীন আক্তার সারাজীবন বয়ে বেড়াবেন আদরের সন্তানের স্মৃতি! মা গো, তুমি ক্ষমা করো আমাদের। পারিনি তোমার জন্য কিছু করতে। পারিনি তোমার সন্তানকে বাচাঁতে। বুকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি তোমার ভালবাসাকে।

আর দেশে যে কোনো ঘটনা ঘটলে কয়েকদিন আলোচনা, সমালোচনা ও গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য কখনো তা আলোর মুখ দেখে না। কিছুদিন পর মাটি চাপা পড়ে যাবে এ ঘটনাটিও। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়- এ রাষ্ট্র, সমাজ ও আইন পারবে কি তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে?

আর মানবিক বাংলাদেশ পারবে কি সত্যিকারের মানবিক হাসপাতাল গড়ে তুলতে? পারবে কি সঠিক চিকিৎসাসেবা দিতে?- সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

লেখক: এস এম ফয়েজ