অণুগল্প

অণুগল্প- শেষ রক্ষা । সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

ছবি : প্রথম আলো

হঠাৎ, অসময়ে রাজীবের ফোন!

রাজীবের ফোন মানে নিশ্চয়ই কিছু একটা। ও ফোনে খুব দ্রুত আমাকে তৈরি হয়ে গলির মুখে আসতে বললো। আমি অবাক না হলেও বুঝতে পারলাম নিশ্চয়ই কোন ঘাপলা আছে।

ওর কথামতো দশ মিনিটে তৈরি হয়ে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যদিও জানি না কোথায় যাচ্ছি কেন যাচ্ছি। ওকে জিজ্ঞাসা করলে জানায়, “আরে চল না! গেলেই দেখতে পাবি। ”

কিছুক্ষণ রিকশা ভ্রমণের পর আমরা একটা রেষ্টুরেন্টে দাঁড়ালাম। এতক্ষণে বুঝতে পারলাম শালার আজকে ডেট আছে। ওর সাথে এতদিনের বন্ধুত্ব হলেও, সহজে ও আমাকে কোথাও নিয়ে যেতে চাইতো না শুধুমাত্র প্রয়োজন ছাড়া। তাই আজ কী মনে করে এখানে নিয়ে এসেছে তা উদ্ধার করতে পারছি না।

এরইমধ্যে যার আসার সে চলে আসলো। দেখেই চোখ ছানাবড়া! এই মেয়ে কিভাবে রাজীবের সাথে সম্পর্ক করতে পারলো! আমার বিশ্বাস -ই হচ্ছে না। আমরা খুব দ্রুত একটি টেবিল নিয়ে বসে পড়লাম।

মেয়েটিকে দেখে খুবই বিমর্ষ মনে হলো। আমি খুব দ্রুত চিন্তা করতে লাগলাম এটা কোন মেয়ে! কেননা আমার গুণধর বন্ধুর তো মেয়ের অভাব নেই! মেয়েটি আমাদের চাইতে দু -এক বছর বড় হবে। তারমানে এটা সেই মেয়ে যার স্বামীর সাথে বনিবনা হচ্ছে না। যার কথা রাজীব আমাকে বলেছিলো।

মেয়েটির কোন সন্তান হচ্ছে না। তারা দুজনই বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেছে সন্তান পাওয়ার জন্য। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। যদিও স্বামীটি ডাক্তার দিয়ে নিজেকে পরীক্ষা করাতে চাইছে না। তার বক্তব্য নাকি -তাদের বংশে এইরকম কোন পুরুষ নেই! তাই তারও কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এটা নিয়ে চলতে থাকা দ্বন্দ্বের মধ্যে পরিচয় রাজীবের সাথে।

আমার বন্ধুর শরীর স্বাস্থ্য মাশাল্লাহ! দেখে বোঝার উপায় নেই বয়স কত। তাই মেয়েটি ওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। স্বামীর যন্ত্রণার দুঃখ লাঘব করতে রাজীবের সাথে মিষ্টি বন্ধুত্বের জড়িয়ে এতদূর এগিয়ে এসেছে।

আমাকে যখন রাজীব এইসব বলে, তখন বলেছিলাম “দেখ, একটা বয়সে বড় বিবাহিত মেয়ের সাথে জড়িয়ে তোর লাভ কী?” তার উত্তর ছিলো “বন্ধু, যেখানে দেখিবে ছাই উড়ায়ে দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন! “আমি বুঝতে পারলাম ও কোন রতনের খোঁজে এতদূর পর্যন্ত আগালো।

বর্তমানে ফিরে আসলাম। হঠাৎ করে মেয়েটি রাজীবের হাত ধরে বলল- “আমাকে তোমার বিয়ে করতে হবে ! ” এমন কথা শুনে যে কারোরই কলিজা কেঁপে উঠার কথা। কিন্তু আমার দক্ষ বন্ধুটি তার বহিঃপ্রকাশ না করেই বলল- “দরকার হলে সবই হবে। তবে আগে মাথা ঠান্ডা করো। ”

আমার দিকে তাকিয়ে ও বললো -“আচ্ছা দোস্ত, তুই বল এখন কী করলে ভালো হবে? ” যদিও আমাকে ও সবই বলেছে। অর্থাৎ তার উদ্দেশ্য কী। মেয়েটির মনে বিশ্বাস আছে যে তার সন্তান হবে। তাই সে তার স্বামীকে ছেড়ে নতুন বিয়ে করে দেখিয়ে দিতে চাই আসলে দোষ কার। কেননা ইতিমধ্যে তার স্বামী আরেকটা বিয়ে করার পাঁয়তারা করছে। তাই সে বাধ্য হয়ে এ পথে আসলো।

রাজীবের বক্তব্য চমৎকার! যেহেতু সন্তান নিয়ে সমস্যা, সেহেতু সন্তান হলেই তো হয়! সেটা যেকোনভাবে হলেই হলো। খুবই মহৎ উদ্দেশ্য! কিন্তু মেয়েটি ওপথে যেতে রাজি নয়। তাই আমার কোর্টে বল ঠেলে দিলো তার মহৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য! ওর স্বভাবই এমন। যেখানে ঠেকে যাবে সেখানে আমাকেই ব্যবহার করবে।

কিন্তু এই ব্যপারে আমার সাহায্য করা কি উচিত হবে? ও যখন বললো কী করলে ভালো হবে? তখনই আমার গা শিরশির করে উঠলো। আমি একটু গা ঝাড়া দিয়ে বলতে শুরু করতে চাইলাম।

যখনই কিছু বলার চিন্তা করলাম, তখনই নিষ্পাপ মেয়েটির দীর্ঘ নির্ঘুম থাকা আঁখির কোণে জমানো অশ্রুর কালো রেখা আমার বুকের গহীনে তীক্ষ্ণ ছুরি আচঁড় দিতে লাগলো। আমি চাইলেই সুন্দর সুন্দর যুক্তি দেখিয়ে তাকে রাজীবের ফাঁদে ফেলতে পারি। কিন্তু দীর্ঘদিনের অযত্ন থাকা তার এলোমেলো চুল গুলো আমার সমস্ত বানানো যুক্তি গুলোকে শক্ত গিঁটে বেঁধে ফেললো।

সেইসাথে তার বুকের ভিতর থেকে আসা প্রতিটি নিঃশ্বাস আমার পশুত্বকে পুড়িয়ে দিতে লাগলো। কিছুতেই আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আমার চিন্তা গুলো কোন এক অদৃশ্য শক্তির কাছে নত স্বীকার করলো। আমি অপরিচিত মেয়েটির সামনে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত হয়ে আমতা আমতা করতে লাগলাম। যা দেখে রাজীবের পায়ের রক্ত মাথায় উঠার অবস্থা। কিন্তু মহিলা আছে বলে কিছু করতে পারছে না।

শেষ পর্যন্ত আমি কিছুই বললাম না। যা বলার রাজীবই বললো। যার মূল বক্তব্য হলো বিয়ে ছাড়া আপাতত যেকোন কিছু হতে পারে। কিন্তু মেয়েটি রাজি নয়। তবুও রাজীব তাকে আশ্বস্ত করতে বিভিন্ন কথা বলে। কিন্তু তাতে মেয়েটি সায় দেয় না।

এভাবে অমিমাংসিত ডেটিং শেষ হয়। মেয়েটি রাজ্যের অবিশ্বাস এবং দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে অসহ্য নরকে ফিরে যেতে বাধ্য হলো। আমার বন্ধুটি পৃথিবীর যত অকথ্য ভাষার গালি আছে তা দিয়ে আমাকে সম্ভাষণ করতে লাগলো।

বন্ধুর আরেকটি ফেইসবুক আ্যাকাউন্ট ডিএ্যাক্টিভ হলো। তবুও কেন জানি আমার মনে খুব শান্তি অনুভূতি হতে লাগলো। সেটা কি একটি মেয়েকে একজনের হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছি বলে? নাকি নিজেকে কোনো পাপের সাক্ষী ও সমর্থক হতে হলো না বলে?

আমার বন্ধুর মতোন আরো শতশত যুবক ওত পেতে আছে এই সমাজে। এমন অবলা নিরুপায় নারীদের সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে তারা বদ্ধপরিকর। কয়জন থেকে আমরা তাদের শেষ রক্ষা করতে পারি? বদ্ধপরিকর

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।