অণুগল্প

অন্তর্দাহ || তানজিম শাহরিয়ার নীল

=তিনুটা কি করে??(অনেক কষ্টে সামলানো গলায় জিজ্ঞেস করে আশিক)
=সাজতেছে(ধরা গলায় উত্তর তিনুর)
=আমার তিনুটাকে খুব সুন্দর লাগছে তাইনা??
=নিজেই এসে দেখে যাও কেমন লাগছে সুন্দর নাকি পেত্নী পুরাটাই
=একদম না আমার তিনুকে কখনোই পেত্নীর মতো লাগতে পারেনা এটা যে আমার পরী
=আর থাকবেনা
সামলাতে না পেরে হুট করেই ফোনটা কেটে দেয় আশিক

তিন্নি যাকে ভালোবেসে তিনু বলে ডাকতো আশিক।দুষ্টু মিষ্টি একটা সম্পর্ক ছিলো তাদের,ছিলো হাজারো আবদার,প্রমিজ আর খুনসুটি।তার এই তিনু পরীটা আর কিছুক্ষণ পর থেকে আর তার থাকবেনা হয়ে যাবে অন্যকারো তিন্নি।বাস্তবতায় বাঁধা পড়ে তাদের রাস্তাটা আজ আলাদা হয়ে যাবে একদম আলাদা।ভেজা চোখে শূন্যে দৃষ্টি মেলে তাকায় আশিক।ভাবছে বিয়ের সাজে তার পরীটাকে কেমন লাগছে আজ।নীল দীগন্তে তিনুর একটা ছবিও এঁকে ফেলে সে।এইতো তার পরীটাকে আজ পরীর চেয়েও সুন্দর লাগছে ভাবতে ভাবতে দু’চোখ বেয়ে রুপালি জল গড়িয়ে পড়ে।আরেহ আশিক কাঁদছে কেন??আজতো তার খুশির দিন তার তিনু যে আজ অনাবিল সুখের দিকে পা বাড়াচ্ছে যেটা হয়তো আশিক কোন দিনও দিতে পারতোনা।হাতের উলটো পিঠ দিয়ে রগড়ে মুছে ফেলে চোখের জলটা সে আর ঠোঁটের কোণে ফুটিয়ে তোলে মিথ্যে একটা হাসি!

তিন্নি কাঁদছে,কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলছে সে তবুও কিছু করার নেই।হয়তো এভাবে আর কখনো মন খুলে কাঁদতে পারবে না সে আশিকের কথা মনে করে।আজ থেকে অনেক গুলো বছর পরের কথা ভাবছে সে।হয়তো অনেক বছর পর হুট করে আশিকের সাথে দেখা হয়ে যাবে কোন এক পথের মোড়ে।আচ্ছা তখন কি আশিক জিজ্ঞেস করবে তিনুটা কেমন আছে??নাকি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবে শুধু।তখন আশিক দেখতে কেমন হবে??আগের চাইতে সুন্দর নাকি ক্ষাণিকটা বদলে তার অচেনা আশিক হয়ে উঠবে??নাহ আর ভাবতে পারছেনা সে।তার ছোট মাথায় এত ভাবনা ধরছেনা আর চিনচিন করে ব্যাথা করছে।

হাঁটতে হাঁটতে আশিক তার আর তিনুর সবচেয়ে পছন্দের জায়গাটিতে চলে আসে।এই সেই জায়গা যেখানটায় তাদের দুজনের ছটি বছর কেটেছে হাতে হাত রেখে আড্ডা দিয়ে।কত হাসি,কান্না,আনন্দ,খু­­নসুটি, মারামারি জড়িয়ে আছে এই জায়গাটিতে হিসেব নেই তার।আনমনেই এসব ভাবতে থাকে আশিক।হঠাৎ ফোনের রিংটোন এর বিরক্তিকর আওয়াজে বাস্তবে ফিরে আসে আশিক।ফোন স্ক্রিনে তিনুর নামটা জ্বলজ্বল করছে।ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভারী কান্নার একটা গলা ছোট্ট করে বলে আশিক আমি যাচ্ছি।নিজেকে সামলে নিয়ে আশিক উত্তর দেয় ভালো থেকো আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দেয় সে।

পকেট থেকে সিগারেট এর প্যাক বের করে একটা মুখে দিয়ে জ্বালাতে যায় আশিক তখনি তিনুর কথা মনে পড়ে তার।এই সিগারেট এর জন্য সম্পূর্ণ বারণ ছিলো তিনুর।কত্ত মার খেয়েছে এর জন্য তিনুর সে তবুও ছাড়েনি কারণ একটাই এই সিগারেট এর জন্যই সে তিনুর মিষ্টি শাসনটা পেতো কিন্তু আজতো আর সে নেই শাসন করার জন্য।উঁহু আজ থেকে আশিক আর নিকোটিন পান করবেনা।হাতের সিগারেটটা দূরে ছূঁড়ে ফেলে দেয় আশিক আর দূর দিগন্ত চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে।আনমনেই আশিকের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে…..

ভালো থেকো তিনু খুব বেশি ভালো থেকো!

ফেনী,বাংলাদেশ