কবিতা

চিরকুট || সোহেল হামজাহ্

রমা শুনছ ,

রাত থেকে আঁধার গলে যাবার আগে শহর ছেড়ে পালাচ্ছি শেফালীর প্রতারণায় শুনে ভীষণ আঘাত পাবে জেনেও বলছি- বংশাল থেকে উনপঞ্চাশ টাকা দিয়ে কেনা তোমার সবচে প্রিয় বাতাবিলেবুর গাছ’টি পানিশূন্যতায় অকালে মরেছে; অথচ তুমি প্রতিদিন সাতসকালে জল ছিটিয়ে সবুজ পাতা ছিঁড়ে নাকে তুলে নয়ন বুজে খুশবু মাখতে নিঃশ্বাসে-। আর শীৎকার দিয়ে বলতে, দ্যাখো নিশো একদিন এ গাছ’টা তোমার ভীষণ উপকারে আসবে; আমি বোকা ছিলাম সেদিন তোমার কথাই কান দিইনি ; কে জানতো তুমি এই ভাবে চলে যাবে আত্মার প্রেম মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে

 

ইটের নিচে চাপা পড়ে

প্রাণ হারাতে বসেছে তোমার নগ্ন পা’য়ের স্পর্শ পাওয়া দূর্বাঘাস। জীর্ণশীর্ণ বাতাসে ধুলোমাটি উড়ে এসে আজ নিশ্চিহ্ন প্রায় তোমার ভীষণ আদরে’র বিড়াল সমাধি – যার মৃত্যুতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলে তুমি দীর্ঘক্ষণ আর চিন্তিত ছিলে দীর্ঘদিন তোমায় সান্ত্বনা দিতে সেইদিন আমি ব্যর্থ হয়েছি। তুমি না থাকা’ই শিউলিও ফুটেনা, আঙ্গিনা ফুলে ফুলে ভরে উঠে না; শিউলি হয়তো জেনে গেছে তাকে কুড়াবার মানুষ এখন এই গন্তব্যে’ই থাকেনা তাই বোধহয় ফুটে উঠেনা ফুটলেও ভুলকরে ঝরে পরেনা তুমি’ই শিউলি কুড়িয়ে মালা গেঁথে আমার হাতে গুঁজে দিতে আর বলতে যত্নে রেখো শিউলি মালা, ওখানে আমার স্পর্শ আছে। আলমারি এককোণে পরে শুকিয়েছে মালা।

 

একুরিয়ামের জল

শুকিয়ে গেছে গোল্ডফিসের অবস্থা করুণ যেখানে জনসংখ্যাবৃদ্ধি পাবে সেখানে হার কাঁচ ভেঙ্গে বেরুবার চেষ্টায় ছুটাছুটি করে প্রতিনিয়ত; এই ঘরে তারাও আর থাকতে চাইনা। আমার স্মৃতি লোপ পাচ্ছে অযত্নে; চোখের নিচে কালিমার পাহাড় স্থাপিত। নোংরা আমার চারপাশের পরিবেশ আমি আমার অসহ্যের প্রকৃত কারণ; ভুলে গেছি নিজের যত্ন নিতে ভুলে গেছি একদম দিন জাগতে,রাত আমায় সত্যি আনন্দিত করে ক্ষুদ্র এ জীবনে প্রথম তোমায় দেয়া শপথ ভেঙ্গেছি আমি;আমি নির্দোষ আর তোমায় দোষারোপ করবো না, অথচ তুমি জানতে তুমিহীন আমি অচল পয়সা, আর তুমিহীন আমার এই পরিবেশ বিষাক্ত দূষণীয়। তুমি অকথা শিখিয়েছিলে আমায়; ভালোবেসে চলে যেতে নেই; আমি যেতে পারিনি ছেড়ে তোমার বিশ্বাস ভেঙ্গে; আজ তুমি লাহোরে।

 

খাঁচায় বন্দি ময়নাপাখি সকাল সন্ধ্যে রমা রমা বলে বলে ডাকতে ডাকতে অস্থির, ঘেন্না জন্মেনা তবু তোমার প্রতি আমার মনে একফোঁটা; ময়নাপাখি আমায় দেখলে চুপ হয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়; বড্ড অভিমানী হয়েছে ঠিক তোমারি মতন; মনে মনে গালমন্দ করেছি নিজেকে অনেক; বন্দিনীর আচরণ দেখে। একটা ময়নাপাখি! আর তার দৃষ্টি উৎকৃষ্ট; গত মঙ্গলবার অতিষ্ঠ হয়ে একবুক দুঃখ নিয়ে খাঁচা উন্মুক্ত করে দিয়েছি এই বাক্য জপতে জপতে; রমা’তো গেলো ভুল বুঝে আমায় ছেড়ে এইবার তুইও যা উড়াল দে; কিন্তু আজ অবধি ময়না উড়াল দিলো না; একদম চুপচাপ; এখন আর সে রমা রমা বলে ডাকে না সে তোমায় ভুলতে বসেছে; আমি না পারছি তোমায় ভুলতে না পারছি ঘৃণা করতে। আমি সঙ্গীহীন একজন; সেই কথা ময়না উপলব্ধি করতে পারছে নিশ্চয় তাই দরদ উতলে উঠেছে, মায়া জন্মেছে। আমার প্রতি যে তোমার মায়ার ছিটেফোঁটা ছিলোনা সেটা ধীরেধীরে বুঝে আটকাচ্ছে, যাক ভালো’ই হলো অন্তত সুখের দুঃখের দু’তিনটে অ-কথা ননস্টপ রেডিও’র মতন বলবার জন্য এক সঙ্গি আবিষ্কার করেছি তোমার মারফতে। শূন্য খাঁচা রেখে তোমার ময়নাপাখি আমার কাঁধে চাপিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি শহর ছেড়ে; লোকে হয়তো ডাকবে পাখি ভাই বলে ডাকুক তবে। তুমি আমায় অপরাধীর কাতারবন্দি করে রেখো না।

 

জমিদার বিজয় বাবুকে বলা হয়নি আমি ঘর ছাড়ছি। তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি, তোমার দেয়া সর্বশেষ উপহার ডায়েরী কলম সঙ্গে নিয়ে নিলাম তোমার জন্য একটি উপহার টেবিলে রাখা আছে,। আরো রাখা আছে একটুকরো বিস্বাদ কবিতা পান করে নিও সময় ফেলে এসে নিয়ে যেও। চাবিখানা তোমার গোলাপ টবে রাখা আছে। আমি প্রতারিত হতে আসিনি রমা; এসেছিলাম তোমার শহরে প্রেম নিয়ে আজ ফিরছি শূন্য হাতে, ধূসর কিছু স্মৃতি অনুভবে।

 

যদি পারো

ফিরে এসো সাজানো ভূবনে ভালোবাসায়।

 

আমি কতদূর পালাতে পারি সেটাও নিশ্চয় তোমার অজানা নয় চিঠির জবাবের অপেক্ষায় থাকব-।

 

প্রাপক :- রমা আমার অনুপমা। ঠিকানা- লাহোর, একশো বায়ান্ন- প্রেরক:- নিশান- তোমার নিশো। ঠিকানা:-পান্থপথ

 

 

বন্দরনগরী,চিটাগাং

আপনার মন্তব্য লিখুন

Click here to post a comment