জীবনের গল্প

দায়িত্বভার || ইসমাম মাহমুদ

দায়িত্বভার

✍ ইসমাম মাহমুদ

 

বাবা ঘুমিয়ে আছেন আমার স্কুলে যাওয়ার  সময় ঘনিয়ে এসেছে –

আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মা আলমারিতে কি যেন

তন্নতন্ন করে খুঁজতেছে_

জিজ্ঞাসা করলাম!

আম্মু কি খুঁজতেছ?

তিনি জবাব দিলেন এখানে ৫ টাকার দুইটা কয়েন রেখেছিলাম তোকে স্কুলে যাবার সময়

দেব বলে এখন পাচ্ছিনা?

 

আম্মু তুমি তো আমাকে গতকাল পয়সা দুটি দিয়ে

বলেছিলে লবণ আনতে ভুলে গেছ হয়তো __

মনে এসেছে এবার,আমি স্কুলে যাচ্ছি আম্মু-

দাঁড়া! মা বাবার পকেট হতে একটা

৫ টাকার কয়েন নিয়ে আমাকে দিলেন আর বললেন “পচা খাবার খাবিনা, ভালো কিছু খাবি”

 

কিন্তু আমি পাঁচ টাকা থেকে তিন টাকা মাত্র খরচ করতাম, বাকি দুই টাকা করে জমিয়ে রাখতাম একটা গেইমস কিনবো বলে। মাঝেমধ্যে পাঁচ টাকাই জমিয়ে রাখতাম। কারণ স্কুলের অনেক বন্ধুর কাছেই আছে কিন্তু চাইলে দেয় না।

 

প্রতিদিন এই ভাবেই আম্মু আমাকে পাঁচ টাকা করে দিতো আর আমি দুই টাকা করে জমাতাম। বাবা ব্যবসার কাজে বাহিরে থাকতো সব সময়, আর মাসে দুই-তিন বার আমাদের দেখতে আসতো। তাই বাবার সাথে মেশার তেমন একটা সুযোগই হয়না আমার। প্রতিদিনের মতো আজও স্কুলের যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, কেন জানি মনে হচ্ছে আম্মুর শরীরটা ভালো না। জিজ্ঞেস করলাম আম্মু তুমি কি অসুস্থ? আম্মু বললো আরে ও তেমন কিছু না, প্রায়ই এমন হয়_ তুই স্কুলে যা দেরী হয়ে যাচ্ছে। ক্লাস শেষে বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে দেখি আম্মুর প্রচুর জ্বর। এত জ্বর যে হুশ নেই। ছোট মানুষ তাই মাথায় আসতেছে না কি করবো?

 

বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে একটা ঔষধের দোকান সেখানে একজন গ্রাম্য ডাক্তার বসেন। দৌঁড়ে গেলাম ডাক্তার নিয়ে আসতে,তিনি বললেন আমার ফি কিন্তু পঞ্চাশ টাকা আগেই দিতে হবে। আর আসা যাওয়া রিক্সার ভাড়াও দিতে হবে। আমি বললাম আপনি দ্রুত আমার সাথে চলেন টাকা যা লাগে আমি জোগাড় করে দিব। তারপর রিক্সা করে সোজা ডাক্তার নিয়ে বাড়িতে, চেক-আপ করে একটা কাগজের টুকরো ধরিয়ে দিল আর বললো এই ঔষধ গুলো আমার দোকান থেকে নিয়ে আসবে।

 

মাটির ব্যাংকটা ভেঙে সব কয়েন গুলো একত্রিত করলাম। হিসাব করে দেখলাম প্রায় ১৯৭ টাকার মতো। যে রিক্সা নিয়ে ডাক্তারকে নিয়ে এসেছি সেই রিক্সায় করে আবার ঔষধের দোকানে ঔষধ নিলাম। বিল আসলো ১৪৫ টাকা।ঔষধ নিয়ে দ্রুত আবার রিক্সা করে বাড়িতে আসলাম। আম্মুকে কোন রকম জাগিয়ে ঔষধ  খাওয়ালাম ডাক্তারের পরামর্শ মতে। ডাক্তার বললো ভয়ের কোন কারণ নেই, দুই একদিন রেস্ট নিলেই ভালো হয়ে যাবে।

 

ডাক্তার বলে উঠলো আমি তাহলে যাই, আমার টাকাটা?

ওহ হে এই নেন আপনার ফি।

ফি দিয়ে দেখলাম আমার কাছে অবশিষ্ট আছে মাত্র ২ টাকা। রিক্সা ভাড়া কি করে দিব?

হঠাৎ মাথায় এলো আম্মু টাকা রাখতো একটা টিনের তৈরি ট্রাংকের ভিতরে। সেখানে হাত দিয়ে দেখলাম মাত্র ৪৫ টাকা আছে। যাই হোক তা দিয়ে চলবে, রিক্সা ভাড়া দিলাম ৪০ টাকা।

 

সারারাত আম্মুর মাথার পাশে বসে জলপট্টি দিতে থাকলাম, কিন্তু দুই চোখ ভর করে কবে যে ঘুম চলে এলো জানা নেই আমার।

সকালে ভোরে আম্মুর ঘুম ভাঙতেই আমাকে এই অবস্থায় দেখে বুকে জড়িয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেছিল” তুই একদিন অনেক বড় হবি বাবা”।

দেখতে দেখতে আজ এত বড় হয়ে গেছি যে পরিবারের সব কিছুর দায়িত্ব আমার উপর, পরিবারের ভালমন্দ সব কিছু আমাকেই দেখতে হয়।

 

বন্দরনগরী,চিটাগাং