অণুগল্প

দোল কথা | © প্রিয়াঙ্কা ঘোষ

দোল উৎসব অন্যতম প্রাচীন একটি উৎসব এবং আমাদের ঋতুচক্রের শেষ উৎসব। এই দোল উৎসবের মধ্যে বেশ একটা আবেগ ভালোবাসা মাখা ব্যাপার আছে। এই উৎসব এখনও আন্তরিক, এখনও অমলিন আনন্দের উৎস। মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বিষাদ, বিরহ-মিলন চক্রাকারে আবর্তিত হয়, কখনও এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে না। এইরকম জীবনে আনন্দের রসদ জোগায় এই উৎসব। সেই কোন প্রাচীন যুগ থেকে একই ধারা বহমান। সেই যুগের সাহিত্য থেকে জানা যায় যে এই রঙের উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাধা কৃষ্ণের অমর প্রেম কাহিনী, এছাড়াও মহাদেব আর পার্বতীর কথাও পাওয়া যায়, তারাও এই উৎসবের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছেন। বসন্তের নানা রঙে রঞ্জিত প্রকৃতির সান্নিধ্যে সমস্ত মানুষের মনে লাগে রঙের পরশ। রঙের প্রলেপে ঢেকে যায় মনের মলিনতা। নানা রঙের আবীরের স্পর্শে ঋতুরাজ বসন্ত যেন আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠে। দোল উৎসবের দিনে চারিদিক মুখরিত হয় রবি ঠাকুর রচিত ‘খোল দ্বার খোল’ গানের ছন্দে। মধুমাসের আলুথালু উদাসী বাতাসের মাদকতায় ফুলে ফুলেও জাগে মূর্ছনা। বসন্ত জাগ্রত দ্বারে মানেই কোকিলের কুহুতান আর পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া বনে রঙের আগুন লাগিয়ে দিয়ে চলে প্রণয় কলহ। তখনই বোধগম্য হয় যে “বসন্ত এসে গেছে”, এবার দোল উৎসব তথা বসন্তোৎসবের পালা। নবীন পাতায় লাগা রাঙা হিল্লোলের সঙ্গে শহর থেকে শহরতলী দোল বিলাসে মেতে উঠবে। বসন্তের সৌরভের শিখায় যেন মতিভ্রম হয়, মনকে উস্কে দেওয়ার প্ররোচনা চলে। মনটাও বাউন্ডুলে হয়ে যায়। উদাসী মন ধেয়ে চলে রূপসাগরের পানে। তখন বাঁধন খুলে হৃদয় প্রেমের জোয়ারে ভেসে যেতে চায়, এই প্রেম আর বসন্ত যেন হরিহর আত্মা, একে অপরের সঙ্গে কেমন একটা চাপাচাপি করে অবস্থান করে। হৃদয়ের বসন্ত বনে মাধুরী বিকশিত হয়তো সবার হয়না, সেই না হওয়া হৃদয়গুলিতেই তখন মর্মরিয়া ওঠে দুঃখ রাতের শতশত গান। কিন্তু তবুও হৃদয় জুড়ে একটা প্রেমের আকুতি লেগেই থাকে। তাই তারা সেই আকুতি নিয়েই পরের বসন্তের দোল উৎসবের জন্য কাল গোনে। এই উৎসব তো সাধারণ অসাধারণের তকমা তুলে দিয়ে সর্বজনের উৎসব হয়ে ওঠে, মানুষের সঙ্গে মানুষের হৃদ্রতার উৎসব,এ এক মিলনোত্‌সব। এখানেই এই উৎসবের সার্থকতা।।