জীবনের গল্প

নাগেশ কুকুনুর জীবনী

সবুজ খন্দকার:
ভারতীয় বিকল্পধারার চলচ্চিত্রকার নাগেশ কুকুনুর। একধারে তিনি পরিচালক, অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, লেখক ও প্রযোজক। কুকুনোরের চলিচ্চিত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘হায়দরাবাদ ব্লুজ (১৯৯৮)’, ‘রকফোর্ড (১৯৯৯)’, ‘থ্রি দিওয়ারিয়েন (২০০৩)’, ‘ইকবাল (২০০৫)’, ‘ডোর (২০০৬)’, ‘ধানাক (২০১৬)’ ইত্যাদি। কুকুনোর ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ ও ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা
১৯৬৭ সালে হায়দরাবাদে জন্ম নাগেশ কুকুনুরের। ছোট সময় থেকেই তিনি তেলুগু, হিন্দি ও ইংরেজি সিনেমা দেখতেন কাছের সিনেমা হলগুলোতে। তাঁর বাবা তাঁকে পাঠিয়ে দেয় তামিল নাড়ুর মোনফোর্ট অ্যাংলো–ইন্ডিয়ান স্কুলে। সেখানে নাগেশ হলিউড সিনেমা দেখার সুযোগ পান। এবং হলিউড সিনেমার নেশায় পড়ে যান। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর নাগের হায়দরাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিক্যাল প্রকৌশলীতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। উচ্চতর পড়ালেখার জন্য তিনি ১৯৮৮ সালে চলে যান আটলান্টাতে। কেমিক্যাল প্রকৌশলীতে জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

ক্যারিয়ারের শুরু
কেমিক্যাল প্রকৌশলিতে লেখাপড়া শেষ করার পর নাগেশ জর্জিয়ার আটলান্টাতেই পরিবেশ পরামর্শক (কনসালটেন্ট) হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যেই তিনি চলচ্চিত্র নিয়ে একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর আটলান্টার ওয়ারহাউজ অ্যাক্টরস থিয়েটারে তিনি অভিনয়ের উপর পড়ালেখা করেন। এরপর ১৯৯৪ সালে তারই সহপ্রযোজনা ও পরিচালনায় তৈরি করেন একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ওয়ান কালচার অ্যাট আ টাইম’।

পরে তিনি খুব তাড়াতাড়ি ভারতে চলে আসেন চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার গড়তে। কিন্তু তিনি খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারলেন সিনেমার জন্য প্রচুর টাকা দরকার। তাই ফের চলে আসেন আমেরিকাতে এবং কাজ করতে থাকেন পরিবেশ পরামর্শক হিসেবে। জমিয়ে ফেলেন বেশকিছু টাকাকড়ি। এবং ফের ভারতে চলে আসে ১৯৯৮ সালে চলচ্চিত্র তৈরির স্বপ্ন নিয়ে।

চলচ্চিত্রযাত্রা
চলচ্চিত্রের শহর মুম্বাইতে তিনি এক বছর দেখেন সেখানকার চলচ্চিত্র বানানোর কায়দা–কানুন। তারপরেই তার নিজস্ব চলচ্চিত্র বানানোর স্টাইল তৈরি করেন। প্রথমবারের মতো তিনি তাঁর আমেরিকায় আয় করার টাকা দিয়ে প্রথম সিনেমা ‘হায়দরাবাদ ব্লুজ’ প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন। নাগেশ এই সিনেমার পাণ্ডুলিপি লিখেছিলেন আটলান্টাতে থাকাকালীন। আমেরিকা ফেরত একজন ভারতীয়কে নিয়ে এই সিনেমার গল্প। তিনি এই সিনেমা পরিচালনা ও অভিনয় করেন। সিনেমাটির বাজেট ধরা হয় ১৭ লাখ, এবং ১৭ দিনেই শুটিং শেষ হয়।

চলচ্চিত্রটি ভারতের সেরা একটি স্বাধীনধারা সিনেমা হিসেবে আলোচিত হয়। দশটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার পাশাপাশি সিনেমাটি হায়দরাবাদ, মুম্বাই ও ব্যাঙ্গালোরে ছয় মাস সিনেমা হলে চলে। প্রথম সিনেমার সফলতার পর নাগেশ জনপ্রিয় অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। সিনেমা নিয়ে নীরিক্ষা করা শুরু করেন। তৈরি করতে থাকেন নানা ঘরানার সিনেমা। এরপর করেন ‘রকফোর্ড’ সিনেমাটি। এই সিনেমাটিতে একটি বোর্ডিং স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তৈরি। এই সিনেমাতে সহশিল্পী হিসেবে কাজ করেন নন্দিতা দাস।

একে একে তিনি চলচ্চিত্র তৈরি করতে থাকেন। এরপরই হাত দেন ‘বলিউড কলিং’ ছবিতে। এই ছবিতে সহশিল্পী হিসেবে দেখা যায় ওম পুরি, নবীন নিচোল, পেরিজাদ জোরাবিয়ান। এই ছবির গল্পও তিনি লেখেন ও ছবিটিতে অভিনয় করেন।

এরপর ভারতে নিয়মিত চলচ্চিত্র বানাতে থাকেন নাগেশ কুকুনুর। তার পরবর্তী সিনেমা থ্রি দিওরিয়েন ছিল থ্রিলার ঘরানার। এই সিনেমায় অভিনয় করেন নাসিরুদ্দিন ইউসুফ, জুহি চাওলা ও জ্যাকি শ্রফ। এই ছবিতেও তাঁর নিজের প্রাথমিক স্টাইল ধরে রাখেন। কিন্তু চিত্রনাট্যে ব্যাপক ডিটেইলের কাজ করেন। ফলে সিনেমাটি গতানুগতিক বলিউড সিনেমা না হয়ে অন্যধরণের সিনেমা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

তিনি হায়দরাবাদ ব্লুজ এর সিক্যুয়েল নির্মাণ করেন। কিন্তু এটি খুব একটা সাড়া জাগাতে পারেনি। আগের ছবিগুলোর মতো ২০০৫ সালের সিনেমা ইকবাল এ তিনি কোনো তারকা অভিনেতাকে নেননি। ভারতীয় মুসলিম পরিবারের একজন বধির ও বোবা ক্রিকেটারকে নিয়ে এই ছবির কাহিনি। এই সিনেমা তাঁকে প্রচুর পুরস্কার এনে দেয়। এরপর ২০০৬ সালে তিনি বানন ডোর। ছবিটি বেশ আলোচনায় আসে। ২০০৮ সালে তিনি নির্মাণ করেন বোম্বে টু ব্যাংকক। এ ছাড়া ২০০৭ সালে তিনি একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানেরও বিচারক ছিলেন। এরপর তিনি এইট গুন টেন তাসবির নামে একটি সিনেমা বানান। যেটি ব্যক্স অফিসে ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়। থ্রিলার ঘরানার সিনেমাটির চিত্রনাট্য ছিল হলিউড স্টাইলের। এ ছাড়া তিনি আশিয়েরন, মোড, লক্ষ্মী ও ধানাক সিনেমা বানান। ধানাক ৬৫তম বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে গ্রান্ড প্রিক্স পুরস্কার জিতে নেয়।