আমি মানেই আনন্দ। আর এই আনন্দের বার্তাবাহক হয়ে আমি এসেছি সবযুগে, সর্বকালে, সব সভ্যতায়, সব সমাজে এবং সকল শ্রেণির মানুষের ঘরে ঘরে। আমার আগমন ঘটে দুজন মানুষের চরম আনন্দদায়ক কোন এক মূহুর্ত্তের ফসল হিসাবে। আমি তাদের জন্যেই অর্থকরী ফসল হয়ে জন্মায় যারা আমাকে দুনিয়ার সভ্য সমাজের কিছু নিয়মকানুন বিধিনিষেধের বেড়াজালে আমাকে ফলায় আর তাদের জন্য আগাছা/অবাঞ্ছিত হয়ে জন্মায় যারা আমাকে এসবের তোয়াক্কা না করে ফলায়। আমার জন্মভুমিতে বীজ ফেলার পর আমার ফসল হয়ে পৃথিবীতে আসার আগ পযর্ন্ত আমার জীবনটি কাটে ফ্লইডে ভরপুর মাতৃগর্ভ নামক এক অন্ধকারাচ্ছন্ন সমুদ্রে। যেখানে আমি বড্ড একা, অসহায়, দূর্বল এবং ভীষন নাজুক অবস্থায় থাকি। একাকি আমাকে ফসল পরিচর্চাকারীর সহায়তায় সমুদ্রের মধ্যে হাবুডুবু খেতে খেতে একটা লম্বা বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে তরল সাদৃশ্য একটি অস্তিতহীন কণা থেকে মাংসল একটি দেহে পরিণত হতে হয়। এই লম্বা পথ পাড়ি দিতে গিয়ে কখনো আমি সমুদ্রের বিশাল জলরাশির মধ্যে হারিয়ে যায় আবার কখনো ঢেউ সামলে এগিয়ে যাই।
কখনো এ পৃথিবীর উপযোগী পত্রপল্লব ছাড়েই অংকরিত হয়ে পৃথিবীতে আসি, কখনো কিছু পত্রপল্লব নিয়ে আসি আবার কখনো সকল পত্রপল্লব নিয়ে পৃথিবীতে আসি। সুস্থভাবে অংকুরিত হয়ে আমার এই পৃথিবীতে আসাটা বড্ড অমসৃণ এবং বড়ই অনিশ্চিত এক যাত্রা। অথচ এই অনিশ্চিত আসাটাকে নিয়েই আমার পরিচচাকারীদের কতো উৎসাহ, কতো উদ্দীপনা, কতো আনন্দ, কতো উৎকণ্ঠা, কতো আয়োজন, যা আমি ভীষণভাবে উপভোগ করি, আমি পুলকিত হই, আমিও তাদের মাঝে মাঝে আমার আলতো ছোয়ায় পুলকিত করি কিন্তু যখন তারা বড্ড সংবেনশীল এই আমার আগমনকে ঘটা করে উৎযাপন করে, আমাকে নগ্নভাবে জনসমক্ষে উপস্থাপন করে, মিডিয়ার মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরে ছড়িয়ে দেয়, তখন আমি ভিষন লজ্জাবোধ করি এবং বড্ড নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। আমি আরও বেশি লজ্জাবোধ করি আমাকে পৃথিবীতে আনায়নকারীদেরও নিয়ে। তখন আমার কাছে তাদেরকে মনে হয় তারা শারীরিকভাবে দেখতে ভীষণ সুশ্রী হলেও তারা বড্ড মানসিক দীনতায় ভুগছে। আমার বিশ্বাস যখন তারা আমাকে এভাবে নগ্নভাব সমাজের কাছে উপস্থাপন করে তখন কিছু মানুষ তাকে প্রগতিশীল, সাহসী, বোল্ড বলে বাহ! বাহ দিলেও তাদের নগ্ন দৃষ্টি আমাকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়, তোমাদের প্রতি আমার প্রশ্ন কেন তোমরা আমাকে capitalize করে তোমাদের আনন্দের জন্য সমাজের সামনে এভাবে উপস্থাপন করো? কেনই বা আমাকে মডেল হিসেবে একটি সংস্কৃতি ধারা তৈরিতে ব্যবহার করছো? যে সংস্কৃতিটি এ সমাজে বড্ড বেমানান।
সাম্প্রতিক সময়ে না, পি, প নামে কিছু তথাকথিত আভিজ্যাত সমাজের কিছু প্রতিনিধির মাধ্যমে সমাজে আস্তে আস্তে আমার এহেন উৎযাপনটার অনুপ্রবেশ ঘটছে, যা দেখে অনেকে উদ্বদ্ধ হচ্ছে, উচ্ছাসিত হচ্ছে। আমি অনুভব করছি, কিছু মানুষের মাধ্যমে আমার এহেন উৎযাপনটা ইতিমধ্যে আমাদের সমাজে অবক্ষয়ের একটি ঝাকুনি দিচ্ছে। আমার ভয় হচ্ছে, না জানি এই ঝাকুনিতে ঘুণে ধরা এ সমাজে আমার উৎযাপনটা সামাজিক ট্রেন্ড (trend) হয়ে না পড়ে, আর সেই ট্রেন্ডে পড়ে একদিন না পুরো সামাজিক মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া সাদা-কালো, উচু-নিচু, ছোট-বড়, নানা ধরণের, নানা বর্ণের আমাদের উৎযাপনের ছবি দিয়ে ভরে যায়? আচ্ছা বলুন তো সেদিন কি ভয়ানক অবস্থাটাই না হবে? কারন এ সমাজ ও সমাজের মানুষগুলো বড্ড অনুকরন প্রিয়।
লেখক: উপ-ব্যবস্থাপক, পিকেএসএফ।
আপনার মন্তব্য লিখুন