রম্য গল্প

রম্যরচনাঃ হে তেল | জাহীদ হোসেন

ছোটো বেলায় ভাবতাম, এদেশে পুলিশ সবচেয়ে শক্তিশালী। যাকে ইচ্ছা তাকে পিটাতে পারে। সেই থেকে পুলিশ হওয়ার একটা সুপ্ত বাসনা ছিলো কিন্তু শরীর ফিট না থাকায় হয়ে উঠে নি। যাহোক পুলিশকে শক্তিশালী ভেবে, দেখা হলেই সালাম ঠুকে দিতাম। সামরিক শাসনের সময় মনে হলো, সব ভারী অস্ত্রতো মিলিটারির হাতে। এবার মিলিটারি দেখলেই সালাম ঠুকে দিতাম। তারপর ভাবলাম, মিলিটারির হাতে ভারী অস্ত্র থাকলেও ব্যবহার সীমিত, কাজেই র‍্যাব মনে হয় সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। যে কথা সেই কাজ, র‍্যাব দেখলেই সালাম ঠুকে দিতাম।

এরপর দেখলাম, পরিবহন শ্রমিক নেতাদের এক কথায় গাড়ি বন্ধ, গাড়ির চাকা ঘুরছে না, দেশ অচল। ভাবলাম যাদের সামান্য ইশারায় দেশ অচল হয়ে যায়, তারাই বেশি শক্তিশালী। এবার তাদের দেখলেই সালাম ঠুকে দিতাম। এরপর সরকারি চাকরির কোটা বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলন এবং কোমলমতি স্কুল ছাত্রদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন আর সাথে সাথে দাবিও মঞ্জুর। ভাবলাম প্রকৃত শক্তিশালী এরাই, সালাম এদেরই প্রাপ্য। কিন্তু না, পরে বুঝলাম তাদের আন্দোলনও নিজস্ব কিছু স্বার্থ হাসিলের জন্য ছিলো, যা মিটে গেছে। এরপর হঠাৎ করেই পিঁয়াজের দাম বৃদ্ধি, তাদেরও সালাম ঠুকে ভাই সম্বোধন করে দাম জিজ্ঞেস করতাম।

এবার তেল নিয়ে আহা সমস্যা বা মহা সমস্যায় আছি। তাই নির্জনে বসে তেলের ব্যবহার আর দুর্ব্যবহার নিয়ে ভাবতে ছিলাম। এদেশে তেলের বিচিত্র ব্যবহার দেখে মনে খুব গর্ব হয়, সত্যি বাংগালী অদ্ভুত বুদ্ধিমান। জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, ঐশ্বরিক তেল, হাত কাচুমাচু তেল, গায়ে মাখা তেল, দেশি তেল, বিদেশি তেল ইত্যাদি ইত্যাদি কত রকমের তেল এখানে বিদ্যমান। তেলের জগতে যখন আনন্দে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম, এমন অসময়ে গিন্নী হাজির। একহাতে খুন্তি জাতীয় কিছু, অন্যহাতে তেলের বোতল উল্টো করে ধরা। কাছে এসেই “পানি বেগুন জ্বলে উঠা” যাকে বলে। রান্নাঘর তেল চিটচিটে হলেও বোতলে কোনো তেল নেই, সেটা জানা ছিলো না। বেশ কয়েকদিন যাবত গিন্নী সাহেবা সয়াবিন তেল আনতে তাগাদা দিচ্ছিলো। বললাম, আপাতত চালিয়ে নিতে থাকো। কেননা দোকানে ঈদের আগে থেকেই তেল নেই, ওরা বলছে সাপ্লাই নেই। ঠিক ওরা অসহায় না আমরা অসহায় বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল।

তবে আজকের সমস্যার মূল কারণ আমি নিজেই। সকালে বাজার থেকে বেগুন আর কইমাছ কিনেছি, ভাজি খাওয়ার সাধ জেগেছিল বলে। আর এসব ভাজির সাথে তেলের বৈধ দৈহিক সম্পর্ক রয়েছে যা মাথায় আসেনি। গিন্নীকে একটু শান্তনা দেয়ার জন্য যেই মাত্র বলতে শুরু করেছি, মাছের তেলেও নাকি মাছ ভাজা যায়। আর যায় কোথায়! আমার মাথাসহ চৌদ্দ গুষ্ঠির মাথাও নাকি ভাজতে পারবে বলে সে জানালো। আমি আমার সাতপুরুষের নাম জানি। কিন্তু চৌদ্দপুরুষ? তারা যাযাবর ছিলো না আদাবর ছিলো, জানা নেই। যাহোক বুঝলাম শান্তি নষ্ট, কথা বাড়ালে সংসার টিকানো দায় হয়ে যাবে। তাই দেরি না করে তেলের খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম। এখন আমার কাছে এই তেল নিয়ে তেলেসমাতির কারবারিরাই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। এক বোতল তেলের বিনিময়ে তাদের হাজার বার সালাম ঠুকতেও রাজি আছি। শুধু একবার দেখা দাও হে শক্তিমান আর আমাকে এ যাত্রায় রক্ষা করো। তারপর, হ্যাঁ তারপর আমিও বুক ফুলিয়ে বলবো-
“হে তেল, তুমি মোরে করেছো মহান।
তুমি মোরে দানিয়াছো পুরুষের সম্মান “।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Click here to post a comment