অণুগল্প

রায়হানের মিষ্টি || রুহুল আমিন রাকিব

আকাশে কি চাঁদ উঠছে?না আকাশে চাঁদের দেখা নেই একটুও
আকাশ জুড়ে আজ কালো মেঘের আয়োজন,
ফজরের আযান এখনো দেয়নি কোন মসজিদে হয়তো আর একটু পড়ে,
মোয়াজ্জিন এর সুমধুর কণ্ঠে বাতাসের সাথে ভেসে আসবে ফজরের আযান।
রবির আলো এখনো না ফুটলেও,সেলিম মিয়ার ছনের ঘরে ঠিক আলোকিত ময় করে একটু আগেই পৃথিবীর মুখ দেখছে রায়হান।
বিয়ের পড়ে অনেক দিন হলো ঘর সংসার করার,
কি না করছে সেলিম মিয়া একটা সন্তান এর আশায়,
যাক অবশেষে আল্লাহ সেলিম মিয়ার মুখ পানে তাকিয়েছে
যদিও নুন আন্তে পান্তা ফুরায়,সব সময় অভাব লেগে থাকে সেলিম মিয়ার সংসারে,
তবুও রায়হানের আদর যথন এর কমতি ছিলো না একটুও।
যখন যা আবদার করতো,সেলিম মিয়া ছেলেকে তাই কিনে দিতো,
রায়হান এর বয়স এখন সাত বছর চলছে
ভালোই চলছিলো ওদের দিন গুলো।
মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাওয়া,কিংবা বাবার সাথে
রিকসায় চড়ে,বাড়ি থেকে একটু দূরে বাজারে যাওয়া,বন্ধুদের সাথে ঝালমুড়ি খাওয়া,রাতে চাঁদের আলো দেখা,মায়ের কাছে নিয়ম করে রাতে ঘুমানোর আগে ভূতের গল্প শোনা,
রোজ ফুটবল নিয়ে খেলা করা,সব কিছুতেই রায়হান ছিলো ভীষণ পটু।
আজ সকাল থেকে আকাশটা মেঘলা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে মাঝে মাঝে দমকা বাতাস,
টেলিভিশনে চোখ সবার,এবার না কি দেশে অনেক বড় বন্যা হবে
ধান চাল এর দাম থাকবে আকাশ ছোয়া,
তলিয়ে যাবে অনেক বাড়ি ঘর,সবুজ ফসল,খেলার মাঠ,হতাহত হবে,গবাদী পশু,হাঁস মুরগি,আরো কত কি।
সেলিম মিয়া চায়ের কাপে আর চুমুক দিলেন না
চায়ের বিল দিয়ে বাড়ি চলে এলো,
সন্ধ্যা থেকে তুমুল বেগে বৃষ্টি হচ্ছে,সেলিম মিয়ার মন খুব খারাপ, রায়হান তখন গভীর ঘুমে,রায়হানের মায়াবী মুখটা একটু দেখল সেলিম মিয়া,এর পর আলতো করে একটা চুমো বসিয়ে দিল রায়হান এর কপালে।
পরের দিন সকাল বেলা সেলিম মিয়া ঘুম থেকে উঠে দেখে বাড়ির উঠান জুড়ে পানি,তলিয়ে গেছে রাস্তার পাশের পুকুর,বড় মাঠ,সবুজ ফসল,সেলিম মিয়া জীবনে আগে এতো বড় বন্যা দেখে নাই।
রায়হানের মন আজ খুব খারাপ,তলিয়ে গেছে রায়হানের প্রিয় স্কুল,খেলার মাঠ।
সেলিম মিয়া খবরের কাগজে চোখ বুলায়,ইয়া বড় বড় অক্ষরে লেখা আরো অবনতি হতে পাড়ে বন্যা,
সেলিম মিয়া গরীব মানুষ একদিন কাজ না করলে খাবার থাকে না ঘরে,
চাল,ডালের দাম বেড়েই চলছে,সেলিম মিয়ার চিন্তা বাড়ে,
আজ দু’দিন হলো রায়হানের জ্বর,কিছুতেই কমছে না,হাসি খুশি রায়হান কেমন যেন চুপসে গেছে,
ডাক্তার ডাকা হলো,ডাক্তার কিছু ঔষুধ দিলেন আর বলে গেলেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রায়হান।
রায়হানের মা সব সময় বসে থাকে রায়হানের পাশে,মাঝে মাঝে শক্ত করে মায়ের হাত জড়িয়ে ধরে রায়হান,মাকে প্রশ্ন করে মা,আমি কি আর ভালো হবো না?
আব্বু কোথায়?
আব্বুকে না বলছি আমার জন্য বন্দর থেকে মিষ্টি আনতে,
আব্বু এখনো আসেনা ক্যান মিষ্টি নিয়ে?
রায়হানের কথায় মাথা নাড়ে রায়হানের আম্মু
এইতো বাবু,আর একটু পড়েই তোমার জন্য মিষ্টি নিয়ে আসবে তোমার বাবা,
তুমিতো জানো বন্দর সেই ম্যালা দূরে আসতে অনেক সময় লাগে
রাত বেড়ে চলছে রায়হান এর জ্বর ও বেড়ে চলছে
কি যেন আবল তাবল সব কথা বলছে রায়হান
আর হঠাৎ হঠাৎ বলে উঠছে আব্বু আমি মিষ্টি খাব,
মায়ের কোলে শক্ত করে মা কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে রায়হান,
পানির পিপাশায় মায়ের কাছে পানি চায়,এর পর এক নিশ্বাঃশে সব পানি শেষ করে,
এখন অনেক রাত আর একটু পড়ে মোয়াজ্জিন এর কণ্ঠে ভেসে আসবে ভোরের আযান,
দূরের কোথাও থেকে ভেসে আসছে বেওয়ারিস কুকুর এর ডাক অঝর ধারায় ঝরছে আকাশ
আরো শক্ত করে মাকে জড়িয়ে ধরলো রায়হান
এর পর জোড়ে একটা ঝাকুনি দিয়ে মা আমি মিষ্টি খাবো বলতে বলতে,নিথর হয়ে পড়লো হাসি খুশি রায়হানের দেহটা।

সফিপুর গাজীপুর