রঙের জীবন

লোভী কাক || রুহুল আমিন রাকিব

বন জুড়ে আজ শুধু হাহাকার চলছে
যে বন জুড়ে শুধু শান্তি আর শান্তি ছিলো,
আজ সেই বন জুড়ে একটুও শান্তির গন্ধ নেই।
ধান শালিক এর মন বড্ড খারাপ তার ইচ্ছে করছে এই জঙ্গল ছেড়ে চলে যেতে,কারণ তার দু’টি ছানা ছিলো,
ছানাদের বাসায় রেখে খাবার খুঁজতে গিয়ে ছিলো
এসে দেখে বাসায় তার একটা ছানাও জীবিত নেই,
ধান শালিকের একটুও বুঝতে বাকি থাকে না,এই কাজ কে করছে,
এই কাজ যে,পাখি জাতির কলঙ্ক বলে পরিচিত বেইমান কাকে করছে এটা এক দম পরিস্কার ধান শালিক এর কাছে।
কিন্তু এ ভাবেতো আর চলতে পারে না,
শয়তান কাক কে একটা উচিৎ শিক্ষা অবশ্যই দিতে হবে,
কারণ এই কাক এর কারণে বন জুড়ে আজ এতো অশান্তি সব পাখিদের মনে,
কোন পাখি বাসায় ডিম পেড়ে বা বাচ্ছা রেখে আহারের খোঁজে কোথাও চলে গেলেই,ওমনি সুযোগ সন্ধানি দুষ্ট কাক এসে বাসা দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে,ডিম,বাচ্ছা খেয়ে ফেলে।
বনের কেউ এই শয়তান কাক পাখিকে দেখতে পারে না,
এরা কি শুধু পাখিদের ক্ষতি করে
এরা মানুষ দেরও ক্ষতি করে,মানুষ এর পালিত হাঁস,মুরগির ছোট ছানা ছো মেরে ধরে নিয়ে আসে,
কবুতর এর বাসায় ঢুকে ওদের ডিম বাচ্ছা খেয়ে ফেলে,
আবার সুযোগ পেলে সাবান টাকা শুটকি মাছ ও চুরি করতে বাদ রাখেনা,
এক কথায় এই দুষ্ট কাক এর জ্বালায়
পশু,পাখি,মানুষ,কেউ ঠিক মতো একটু শান্তিতে থাকতে পারে না।
এই শয়তান কাক এর কারনে মানুষ,পাখিদের জাত তুলে গালি দেয়,ওদের বাসা ভেঙে দেয়,যখন তখন এসে ওদের উপর হামলা করে আরো কতো কি যে করে এর কোন শেষ নেই।
কিন্তু এ ভাবে আর কতো দিন চলবে?
সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো যে করেই হোক,
শয়তান কাক কে এই বন থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে,নয়ত মেরে ফেলতে হবে,
বনের সব পাখিরা মিলে জরুরী মিটিং এর ডাক দিলো,
শুধু কাক পাখিকে ডাকা হলো না
মিটিংএ প্রধান অতিথি করা হলো সাহসি পাখি ফিঙে কে,
একে একে সব পাখি ওদের সমস্যার কথা মঞ্চে উঠে বললো,
ঘুঘু পাখি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললো আমি কখনো কারো ক্ষতি করিনা কিন্তু কাক সেদিন এসে আমার মিষ্টি ছানা দু’টি কে খুঁবলে মেরে ফেললো আমার চোখের সামনে,ঘুঘুর কথা শেষ হতে না হতেই,বুলবুলিও বলে উঠলো হ্যাঁ হ্যাঁ ও আমার বাচ্ছা কে ও মেরে ফেলছে,ফিঙে পাখি গভীর মনযোগ সহকারে সব পাখিদের সমস্যার কথা শুনলেন,
এর পরে সবাই কে বললেন সবাই শুনেন,
কাক পাখি জাতির কলঙ্ক,
আশুন আমরা সবাই ওকে ঘৃণা করি,
সবাই ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই,
সব শেষে কাক পাখিকে শায়েস্তা করার জন্য
গুরু ভার দেওয়া হলো বনের সব থেকে প্রবিন পাখি কাকাতুয়াকে,
আগামী তিন দিন এর মধ্যে সমাধান দিতে বলা হলো কাকাতুয়াকে।
এর পর যে যার মতো করে বাসায় চলে গেল,
আর যাবার আগে সবাই কে সাবধান করে দিলো ফিঙে পাখি,
যাতে করে কোন ভাবেই ওদের এই মিটিং এর কথা,দুষ্ট কাক না জানতে পারে।
পরেদিন কাকাতুয়া এলো লোকালয়ে
এর পরে একজন রাখাল ছেলেকে দেখলো মাঠে গরু চড়াতে,রাখাল কে দেখে কাকাতুয়া ওদের বনের সব সমস্যার কথা খুলে বললো।
রাখাল কাকাতুয়ার কথা শুনে মনে ভীষণ কষ্ট পেলো এর পরে রাখাল কাকাতুয়াকে বললো
কাক পাখির সাথে বন্ধুত্বর আচরন করতে,
এর পরে কাক পাখিকে রাখাল এর কাছে নিয়ে আসতে,
কাকাতুয়া বললো ঠিক আছে রাখাল ভাই ,তোমার কথা মতো আমি সব কাজ করব,
পরের দিন,দুষ্ট কাক পাখিকে সাথে নিয়ে রাখাল এর কাছে উড়ে এলো কাকাতুয়া,
কাককে দেখে রাখাল বললো
কাক ভাই কাক ভাই
ওই যে মাটির হাড়িটা দেখা যাচ্ছে
ওই হাড়িতে অনেক মাংসও পানি আছে,তুমি চাইলে পেট ভরে খাইতে পারো ইচ্ছে মতো।
রাখাল এর কথা শুনে লোভী আর বোকা কাক একটুও বিলম্ব না করে উড়ে গিয়ে যেই হাড়িতে ঠোঁট ঢুকিয়ে দিছে,
ওমনি হাড়ির ফুটন্ত গরম জলে
লোভী কাকের ঠোঁট পুড়ে ফোঁসকা পরে গেছে।
দিনে দিনে পোড়া জায়গায় আরো বড় রকম এর ক্ষত সৃষ্টি হলো
ঠোঁট দিয়ে কিছু আহার করতে না পেড়ে দিনে দিনে দূর্বল হয়ে একদিন লোভী কাকের মৃত্যু হলো।
আর এর পরে আবার সবাই মিলে মিশে সুখে শান্তিতে বনে বসোবাস করতে লাগলো,
আর লোভী কাকের দল বুঝতে পারলো লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।