অণুগল্প

শতাব্দী অবধি যে পথচলা || সাখাওয়াৎ আলম চৌধুরী

কড়ির উপর কড়ি সাজাবার বয়স থেকেই মেয়েটি ছিলো চঞ্চল।
উদ্মাদনা, হাস্যজ্জ্বল সাদামাটা ছিলো তার জীবন ;
মনের গহীনে ছিলো তার ছোট্ট ছোট্ট কিছু স্বপ্ন,
যা তাকে অহর্নিশ ভাবিয়ে রাখত মরিচিকার হাতছানির মত।
জীবনের রঙিন অস্থির সময়ে হয়তো কেউ
নিয়েছিল ঠাঁই তার স্বপ্নের রাজ্যের ছোট্ট আঙ্গিনাতে।
তবে জীবন কারাগারে নিয়তির টানে
তাকে ঝুলতে হলো কোন এক বিষন্ন বটের গলায়।
সবকিছু পাওয়ার মাঝেও যদি বন্দীত্ব থাকে,
তবে সেটি হবে পৃথিবীর নিগৃহীত বন্দীশালা।

মেয়েটি পারে না সবকিছু নিজের করে নিতে –
যেখানে সমাজ তাকে পড়িয়ে দেয় শিকল নির্দিষ্ট সীমানার অঙ্গনে।
পৃথিবীর স্বর্গীয় সুখ বুঝার আগেই
কোলজুড়ে চলে আসে তার অস্তিত্বের একটুকরো ভালবাসা।
নিজের ইচ্ছে আকাঙ্খার সেই ধূসর নীলিমায়
হারিয়ে যাওয়ার একান্ত অনুভূতি গুলোর হয় সলিল সমাধি।
রিক্ত হৃদয়ে নরককুণ্ডে আত্মরতি উর্ণার আড়ালে
বয়ে চলে সে নিজের জীবন্ত লাশের দেহ।
হাজারো বিষন্ন গোধূলি পার করে টিকে থাকে
বুনো বাসনার অনিচ্ছার উদ্বেল স্রোতের বিপরীতে।
নিস্তব্ধ মৃত শশ্মান রাত্রি মাড়িয়ে
কুয়াশা মেঘের আড়ালে সূর্যের কিঞ্চিত রশ্মি তাকে আশা জাগায়।
সুপ্ত মনের মাঝে ছোট্ট একটি স্বপ্ন উঁকি দেয় ;
শৃঙ্খলিত সমাজে সে যা পারেনি –
তাই সে জয় করতে চায় তার সন্তানকে ঘিরে।
আর এটাই শ্বাশত বাংলার নারীদের একটি জীবন,
যেখানে সবকিছু হারিয়ে সামান্য খড়কুটো
আঁকড়িয়ে বাংলার ললনারা বেঁচে আছে শতাব্দীর পর শতাব্দী।

পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।