অণুগল্প

শেষ সঙ্গী | শুভ্রশোভন রায় অর্ক

“শেষ সঙ্গী “

এই ঘরবন্দি জীবন বড়ই স্বাদবিহীন। করোনার ভীতিতে যতই ভীতসন্ত্রস্ত ছিলাম, হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে ততই ত্যাক্ত-বিরক্ত। একদিকে বেঁচে থাকার তাগিদ অন্যদিকে ঘরবন্দি বিস্বাদ সময় জীবনকে হঠাৎ ই নিশ্চল করেছে।
আজ সকাল থেকে মেঘলা আকাশ। এপাশ-ওপাশ করতে থাকা আধঘুমে গতরাতে টিনের চালে কখনো মৃত পাতাদের আচড়ে পড়ার শব্দ, ছোট ডাল ভাঙার শব্দ ছাপিয়ে বৃষ্টির টাপুর টুপুর আমাকে ঘরছাড়ার প্ররোচনা দিয়ে গেলো।
অন্যরকম পরিবেশ আজ হঠাৎই আমাকে ইচ্ছের জগতে নিয়ে যাচ্ছে শুধু। মন চায় নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে ছুট দেই অজানার পথে। মাঝপথে প্রিয়জন যদি আসে কেউ তবে তাকে নিয়েই পালিয়ে যাই। নীরব কোন পাহাড়ের কোলে, যার নীচের উপত্যকা ঘনজঙ্গলে সবুজমাখা৷ মনুষ্যবিহীন জনপদে থাকবে না মরনব্যাধী ভাইরাসের ভয়। প্রকৃতি সেখানে দুহাতে ভরিয়ে দিবে সাতরঙ।
রাত জেগে তারা গুনবো, শেষরাতে ক্যাম্পের আগুন উসকে দিয়ে অপলক চেয়ে থাকবো হয়ত ঘুমন্ত রাজকন্যার দিকে।
শুভ্র সকালে মেঘেরা নেমে আসবে তুলোর মত। আদরের পরশ মেখে দেবে । ধোঁয়া উঠা চায়ের মগ নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে থাকবো সবুজের মাঝে একান্তে। হয়ত পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবে কেউ। আমরা মুচকি হাসবো।
বাড়ি-ঘর, জনপদ, দেশ সব কিছুই ভুলে যাবো কিছুটা সময়ের জন্য৷
মায়াজালে আচ্ছন্ন থাকবে আমাদের কালচক্র।
তার হাত ধরে খিলখিলিয়ে হাসতে থাকবো প্রাণভরে৷
এমন কি হতে পারে না?
আচ্ছা, হতেই তো পারি আমরা দুজন পৃথিবীর “শেষ সঙ্গী “….!!

শুভ্রশোভন রায় অর্ক
গল্পকার
থানাপাড়া, লালমনিরহাট