চারদিকে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। গভীর রাত। ঘুটঘুটে অন্ধকার। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনে নুর আলীর হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে নুরবানুর দিকে এক নজরে থাকিয়ে আছে।।
নুরবানু ঠিকমতো খেতে না পেরে অনেক শুকিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে রূপ লাবণ্য। এক সময় নুরবানুর ঠোঁটে ছিলো ভুবনজয়ী হাসি। নুরা আলী হাসি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো!!
নুর আলী প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় বাসায় চলে আসতো। বিয়ের আগে পাড়ার দোকানে রাত ১০ টা পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতো। কিন্তু বিয়ের পর একদম পরিবর্তন হয়ে গেছে। বন্ধুরা তো বউ পাগলা নুর উপাধি দিয়েছে! আর কত হাস্যকর কথা শুনায় নুর আলীকে!!
নুর বানু ঘরের সব কাজ শেষ করে যখন সন্ধ্যায় কুপির আলোতে আয়নার সামনে বসে একটু সাজগোছ করেতো, তখন নুর আলী দৃশ্য গুলো লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেতো। গ্রামের এক কোণায় একলা ঘর, চারদিকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার আলোতে, নুরবানুকে নিয়ে পুকুর পাড়ে বসে চাঁদের আলো দেখতো!!
নুর আলী কাশতে কাশতে বারান্দায় বসে পড়লো। কিছুতে কাশি কমছে না।।
কাশির সাথে রক্ত যাচ্ছে, রক্ত দেখে একটু ও বিচলিত হলো না নুর আলী। মৃত্যু বাসে বেঁধেছে, ক্যান্সার এর রোগীরা বাঁচার স্বপ্ন দেখে না, মৃত্যুর প্রহর গুনে। বুকের ব্যথা বেড়েছে। নুর আলীর ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। আর বেশি দিন বাঁচবেনা! তার রোগের কথা কেউ জানেনা!!
বৃষ্টি কিছুতে থামছে না, বজ্রপাতের শব্দ শুনে নুরবানুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। বারান্দায় এসে দেখে নুর আলী বাহির দিকে এক নজরে থাকিয়ে আছে। মনে হয় অনেক কিছু চিন্তা করতেছে। পাশে নুরবানু দাঁড়িয়ে আছে, তা টেরও পেলো না।।
-এত রাতে এখানে কি করো?
-কখন আসছো?
-এত কি চিন্তা করো??
এত গুলো প্রশ্নের উত্তর একসাথে কিভাবে দেবো??
একটা একটা উত্তর দাও……….!!
নুর আলী কিছু বলছে না, হঠাৎ নুরবানু বললো, তোমার শরীর ভালোতো??
-নুর আলী বললো, আমার একটা কথা রাখবা!
-কি কথা?
-আমাকে এক কাপ চা খাওয়াবা??
-আচ্ছা, আমি চা বানিয়ে আনতেছি!!
-নুরবানু রান্নাঘরে চা বানাচ্ছে, নুর আলী কুপির আলোতে লুকিয়ে লুকিয়ে নুরবানুকে মন ভরে দেখতেছে, এত দেখে তবুও দেখার স্বাদ মিটে না!!
নুরবানুর কাঁধের উপর হাত রেখে নুরআলী চা পান করতেছে, তুমি আমাকে এত ভালোবাসো কেনো? একটু কম ভালোবাসতে পারো না?
-হইছে এত রাতে ঢং করা লাগবেনা, চলো এখন ঘুমাবো!!
-আমারতো ঘুম আসেনা, চোখ বন্ধ করলে মনে হয় আর চোখ খুলতে পারবো না।
-এমন কথা বলতে নেই। আমি তোমার মাথায় হাত বুলাবো, দেখবা ঘুম আসবে!!
নুর বানুর কুলের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে নুর আলী। চোখে ঘুম নেই, মনে সুখ নেই। সব কিছু তার কাছে ঝাপসা লাগতেছে!!
-বউ আমি যদি মরে যায় তুই একা কিভাবে থাকবি?
-ভুলে কি গেছো, আমাকে কি কথা দিয়েছিলে?
-ভুলবো কি করে? কেউ কি বাসর রাতের কথা ভুলে থাকতে পারে??
-তুমি না কথা দিয়েছিলে, এক সাথে মরবা, এক সাথে বাঁঁচবা!
-কথাতো দিয়েছিলাম, কিন্তু উপরওয়ালা যদি তোমার আগে আমাকে নিয়ে যায়, তাহলে কি তোমার শক্তি আছে? আমাকে ধরে রাখবার!
-নুরবানুর চোখে পানি, নুরআলীর ঠোঁটের কোনায় পড়লো।
-বউ তুই কাঁন্দিস না!
-আমি তুকে ছেড়ে কোথাও যাবো না!
-নুর বানুকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আছে নুরআলী।
-বৃষ্টির শব্দ, বজ্রপাতের আলোতে আলোকিত পুরা ঘর।।
নুর আলী কুপির আলোতে নুর বানুর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে, এই দেখার স্বাদ মিটছে না…
আপনার মন্তব্য লিখুন