কবিতা

স্ফুলিঙ্গ | আবু সাঈদ সরকার

স্ফুলিঙ্গ
—আবু সাঈদ সরকার

আমি নারী
কবিতা, গল্প, উপন্যাসের
অব্যক্ত বিশেষণের অধিকারী।
আমার লাবণ্যে বিমোহিত কবিরা,
কখনো কখনো আমাকে দেবী বলে,
সম্বোধন করেন।
আমি নাকি সৃষ্টির বিস্ময়।
হাসি পায় শুনে,
এসব তুচ্ছ তাচ্ছিল্লের ভালোবাসা আমার চাইনা!
আমি হতে চাইনা দেবী,
হতে চাইনা তোমাদের অব্যক্ত সম্বোধনের অধিকারী।
আমার অধিকার আমি ছিনিয়ে নিতে জানি,
আমিও তোমাদের মতই রক্ত মাংসের মানুষ,
আমার ভেতরের মানুষটিকে যদি কখনও দেখার সুযোগ হতো,তবে হয়তো মুখ লুকিয়ে রাখতে লজ্জ্বায় কিংবা অনুশোচনায়!
নারীত্বের অবয়ব দেখে,
তাকে আলাদা কর মানুষ হতে,
আলাদা কর সমাজ-সভ্যতা-সংস্কৃতি
ইতিহাস থেকে,
শুধু কি সমাজ সভ্যতা, অভিধানেও আমরা নিগৃহীত হয়েছি তোমাদের দ্বারা,
নারী খুব নষ্ট হলে অভিধান তাকে বেশ্যা বলে,
অথচ বেশ্যার কোন পুরুষবাচক শব্দ নেই সে অভিধানে!
তাহলে কি নারী মানেই অবাঞ্চিত কিছু?
যদি কখনও ঘোর অভিমানে নারীর মাতৃত্ব
বন্ধাত্ব বরণ করে, তবে বিলিন হয়ে যাবে
তোমাদের সভ্যতা,
তোমাদের জস-খ্যাতি কিংবা ক্ষমতা
টিকিয়ে রাখতে পারবেনা মনুষ্য পৃথিবীর কোলাহল!
আর এটিই নারীর অহংকার!
এ অহংকার, পৃথিবীর সৌন্দর্য্য।

সেই জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত
জীবন নদীতে ভাসমান পদ্মের মত
আশ্রয়ের কিনারা খুঁজে ফিরি,
বিশ্বাসের চোখে খুঁজি পাশাপাশি দুটো ছায়া
যে ছায়া থেকে আলাদা করবে না কেউ,
আমি নারী!
আমার অস্তিত্ব সেখানে শুধুই মানুষের!
অথচ সেই ভূমিষ্ঠ লগ্নে মেয়ে হয়ে জন্মানোর অপরাধে বাবাও মন খারাপ করেন
তাঁর মলিন মুখ দেখে
শুরু হয় আমাদের নারীত্বের যুদ্ধ।
তারপর কখনো মা হয়ে কখনো স্ত্রী হয়ে কখনো
কন্যা হয়ে কখনোবা প্রেমিকা হয়ে জলাঞ্জলি
দেই সব চাওয়া পাওয়া, যত অভিযোগ অনুযোগ!
তোমাদের পুরুষ পুরুষ ভাবনার জালে
আটকে পড়া এই আমরা
দাঁতে দাঁত চেপে মেনে নেই
অসম সভ্যতার নিয়ম কানুন।
তাই বলে এটা নয়,
আমরা তোমাদের ভোগ্য পন্য,
যে শরীর দেখে তোমরা মতিভ্রম হও
একবারও সে শরীরে মাতৃত্বের চিহ্ন খোঁজ না
যদি মাতৃত্বের চিহ্ন পেতে
তবে নত হতো তোমাদের শকুনি নজর ।
ছিঃ ঘেন্না হয় তোমাদের প্রতি
যদি কখনো পুনর্জন্মের সুযোগ পাই
তবে পুরুষ হয়ে জন্মাবোনা তখনও।
তোমাদের কামনার মদ্যপ চোখে এতো লালসা
যেন তা নর্দমার কিটের চেয়েও নোংড়া।
আমি নারী,
তবে,
তোমাদের মত দাম্ভিক পুরুষের জন্য নয়,
তোমাদের জন্য আমি আগ্নেয়গিরি!
প্রয়োজন হলেই তোমাদের পুরুষত্বের দাম্ভিকতায় ঢেলে দিতে পারি জলন্ত লাভা।
কামনার চোখ নামিয়ে কখনো যদি
আমাকে মানুষ হিসেবে তাকাতে পারো,
তবে সেদিন মনে হবে,
আমি সৃষ্টির বিস্ময়!
আমি কল্যানময়ী
আমি জগৎনন্দিনী।

১৩-১০-২০২০